শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) যৌন নিপীড়নের পর কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘নাটক’ ও পরে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যায়’ রূপ দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিলেন এই ওসি।
দুটি ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ধরনের আরও অসংখ্য অভিযোগে বুধবার সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাকে নানাভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন ওসি মোয়াজ্জেম। ঘটনার পর থেকে প্রকাশ্যে না বললেও আকারে-ইঙ্গিতে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
ওই সময় তার রহস্যজনক আচরণে অনেকে ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। ৯ এপ্রিল এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ওই মাদ্রাসায় এলে ওসির কুকর্ম প্রকাশ্যে আসে। এ সময় ডিআইজি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব না দিলেও ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন উত্তেজিত হন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে রাফিকে নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দু’জনকে থানায় ডেকে নেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করার সময় নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিও প্রকাশের পরই ওসিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান নারীনেত্রী, মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয়রা। পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্তা জানিয়েছেন, এভাবে বক্তব্য ভিডিও করা অপরাধের মধ্যে পড়ে। অভিযোগ করতে আসা কারোর বক্তব্য দেয়ার দৃশ্য ভিডিও করলে তার (ওসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ভিডিও ধারণের ঘটনা জঘন্য। এমন ঘটনা হলে তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এর আগে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ছাগলনাইয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে। ঘুষ কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ চুরি, মামলার আলামত চুরি করে বিক্রি করে দেয়া, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া, টোকেন দিয়ে নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসোয়ারা আদায়, ভুয়া মামলা দিয়ে অর্থ আদায়, নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে সেখান থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। তারও আগে ফেনী মডেল থানা থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জামায়াতের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা- আইজিপি : পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ওসিকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এখন তদন্ত চলমান রয়েছে। যদি তার কার্যকলাপে প্রমাণ হয় যে মামলাটি যথাযথভাবে সামাল দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, তাহলে আইন অনুযায়ী তার (ওসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নুসরাতের মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply